তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প প্রধানের বাংলাদেশ সফর: সামরিক খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন

Published: Jul 10, 2025
*No Image

গত ৮ জুলাই ২০২৫, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার (SSB) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক হালুক গরগুনের একদিনের বাংলাদেশ সফর শুধু একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক আয়োজন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতসহ প্রযুক্তি, কারিগরি দক্ষতা ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।

অধ্যাপক গরগুন ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাবেচা ছাড়াও যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে আরও গভীর সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে।

এই সফরটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রতিরক্ষা খাতে নির্ভরতার বৈচিত্র্য এনে দিতে পারে। এতদিন বাংলাদেশ মূলত চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করলেও, তুরস্ককে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তুরস্ক বিশ্বজুড়ে তার উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি, সাঁজোয়া যান এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশও সেই প্রযুক্তিগুলো পাওয়ার সম্ভাবনায় প্রবেশ করল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তুরস্ক শুধু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করতে আগ্রহী নয়, বরং তারা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং স্থানীয় জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়তে চায়। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

তুরস্কের বায়রাকতার ড্রোন প্রযুক্তি বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রশংসিত। এই সফরে বায়রাকতার TB2 বা ভবিষ্যতের উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি বাংলাদেশে আনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও উপকরণ নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিরক্ষা শিল্প ক্লাস্টার স্থাপনের সম্ভাবনা। তুরস্কের SSB এই বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা দিতে চায়। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নিজেই কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করে রপ্তানির পথেও এগোতে পারবে।

সামরিক দিক ছাড়াও এই সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্বও রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্ক তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায়, এবং বাংলাদেশকে একটি আস্থাভাজন মিত্র হিসেবে দেখছে। অপরদিকে বাংলাদেশও বহুমুখী কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায়, যাতে কোনো একক উৎসের উপর নির্ভরতা কমে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, হালুক গরগুনের এই সফর বাংলাদেশের সামরিক খাতের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শুধু একটি সফর নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি কৌশলগত মোড়। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনাগুলো কত দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে এগোয়, এবং তা কতটা টেকসই ও ফলপ্রসূ হয়।

News Categories: