আধুনিক নৌযুদ্ধে কৌশলগত পরিবর্তন: এআইপি প্রযুক্তি বনাম প্রচলিত সাবমেরিন
Published: Aug 25, 2025
আধুনিক নৌযুদ্ধে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা ও শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় সাবমেরিন এখন অপরিহার্য সম্পদ। এর মধ্যে Air-Independent Propulsion (AIP) প্রযুক্তি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।
-> AIP প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে:
প্রচলিত ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনকে নিয়মিতভাবে পানির উপরে উঠতে হয় অক্সিজেন গ্রহণের জন্য। কিন্তু AIP সিস্টেমে বাইরের বাতাস ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়, ফলে সাবমেরিন দীর্ঘ সময় গোপনে পানির নিচে অবস্থান করতে পারে।
-> AIP প্রযুক্তি মূলত তিন ধরনের:
(১) ফুয়েল সেল সিস্টেম (সবচেয়ে উন্নত ও বহুল ব্যবহৃত):
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কোনো মুভিং পার্ট না থাকায় এটি অত্যন্ত নিঃশব্দ ও কার্যকর। জার্মানির Type 212/214 সাবমেরিন এই প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
(২) স্টার্লিং ইঞ্জিন:
লিকুইড অক্সিজেন (LOX) ও ডিজেল জ্বালানি ব্যবহার করে তাপ উৎপাদন করে, যা বন্ধ সিস্টেমে গ্যাস গরম করে পিস্টন চালায়। সুইডেনের Gotland-class এ এর সফল প্রয়োগ দেখা যায়।
(৩) ক্লোজড সাইকেল ডিজেল ইঞ্জিন:
পুনঃপ্রক্রিয়াজাত অক্সিজেন দিয়ে ডিজেল ইঞ্জিন চালানো হয়। তবে বর্তমানে এটি প্রায় অচল প্রযুক্তি।
-> AIP সাবমেরিনের মূল সুবিধাঃ
(১) ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানির নিচে অবস্থান
(২) অত্যন্ত কম শব্দ, ফলে শনাক্তকরণ কঠিন
(৩) দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি ও গোপন অভিযানে সক্ষমতা
-> প্রচলিত সাবমেরিনের সীমাবদ্ধতাঃ
(১) ২-৩ দিন পরই পৃষ্ঠে উঠতে হয় বাতাস নেবার জন্য
(২) বেশি শব্দ, সহজে সনাক্তযোগ্য
(৩) অপারেশনাল সময় সীমিত
নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের বিকল্প না হলেও, AIP প্রযুক্তি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনকে দিয়েছে বহুগুণ বেশি স্টেলথ, টিকে থাকার ক্ষমতা এবং অপারেশনাল দক্ষতা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বর্তমানে AIP প্রযুক্তির সাবমেরিন না থাকলেও, ভবিষ্যতে AIP প্রযুক্তি সংবলিত সাবমেরিন হতে পারে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, ব্লু-ইকোনমি সুরক্ষা এবং আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শনের এক কৌশলগত সংযোজন।