আধুনিক ফাইটার জেটের যুগে বাংলাদেশ কেন পুরনো তৃতীয় প্রজন্মের এফ-৭ ফাইটার বেছে নিয়েছিলো?

প্রকাশকাল: জুলাই ২৬, ২০২৫
*No Image
(ছবির উৎস: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী)

যেখানে বিশ্বজুড়ে চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমানের দিকে ঝুঁকছে সামরিক শক্তিগুলো, সেখানে বাংলাদেশ এখনও তৃতীয় প্রজন্মের পুরনো এফ-৭ যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভর করছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—কেন এমন পিছিয়ে থাকা সিদ্ধান্ত? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার খেলা। চলুন বিশ্লেষণ করি সেই কারণগুলো।

>>মিগ-২৯ ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন:

১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার কথা ছিল। এটি ছিল দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের এক বড় পদক্ষেপ। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই চুক্তি বাতিল করে দেয়। শেষ পর্যন্ত কেবল ৮টি বিমান সরবরাহ করা হয়।বাকি ৮টি বিমানের দাম পে করা হলেও ডেলিভারি নেওয়া হয়নি। পরে সেগুলো রাশিয়া পোলান্ডের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেয়। এই কেনাকাটায় সাবেক আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে, যা রাজনীতিতে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। ফলে ভবিষ্যতে চতুর্থ প্রজন্মের রাশিয়ান যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে রাজনৈতিক দ্বিধা তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়ে সামরিক পরিকল্পনায়।

>>চীনের ফ্রেন্ডশিপ ডিপ্লোমেসি,F-7BG ও বিএনপি সরকার:

মিগ-২৯ বাতিল করার পর বিএনপি সরকার চীনের সঙ্গে সামরিক বন্ধুত্ব জোরদার করতে চায় এবং রাশিয়ার পরিবর্তে ২০০৫ সালে চীন থেকে তৃতীয় প্রজন্মের F-7BG যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। চীন ছিল বিএনপি সরকারের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক মিত্র, এবং এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।যদিও প্রযুক্তিগত দিক থেকে F-7BG ছিল পিছিয়ে থাকা একটি প্ল্যাটফর্ম, তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ছিল ‘নিরাপদ’ ও সহজ সিদ্ধান্ত।

>>ভারত ফ্যাক্টর ও আওয়ামী লীগের F-7BGI কেনা:

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে এবং ২০১১ সালে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনা শুরু হয়। তবে প্রতিবেশী ভারত এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ, আধুনিক ফাইটার বাংলাদেশকে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জে পরিণত করতে পারত।ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা এড়াতে এবং চীনকেও খুশি রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার চতুর্থ প্রজন্মের পরিবর্তে আবারো তৃতীয় প্রজন্মের F-7BGI বিমান কিনে চীন থেকেই। এতে একদিকে ভারতের উদ্বেগ কমে, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কও রক্ষা পায়। এই সিদ্ধান্ত ছিল এক ধরনের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা।মজার বিষয় বাংলাদেশের কেনা F-7BGI ই ছিলো এফ-৭ যুদ্ধবিমানের শেষ মডেল এরপর ২০১৩ সালে চীন এই বিমান তৈরির প্রডাকশন লাইন বন্ধ করে দেয়।

আর আওয়ামীলীগের কেনা এই এফ-৭ বিজিআই এর ডাবল সিটার ট্রেনিং ভার্সনের যুদ্ধবিমানই মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কেরে নিয়েছে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রাণ।

জানি না কবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অত্যাধুনিক ৪.৫ বা ৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পাবে, জানি না কবে আমরা রাজনৈতিক ও অন্য দেশের প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজেদের প্রয়োজন ও ইচ্ছা অনুযায়ী যুদ্ধবিমান ও সামরিক অস্ত্র কিনতে পারবো? নাকি এখনো ভারত, চীন, রাশিয়া, আমেরিকাকে খুশি করার কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার খেলায় বাংলাদেশ অধিনস্ত হয়ে থাকবে?

নিউজ ক্যাটাগরি:
এই সংবাদটি শেয়ার করুন: